স্বাস্থ্য ডেস্ক : মানুষ হরহামেশাই কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ অনুভব করে। এই মানসিক চাপ অনেক সময় স্বল্প মেয়াদে মানুষকে কাজের প্রতি অনুরাগী হতে সহায়তা করে। যেমন- আপনি যদি চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ অনুভব করেন, তবে নতুন চাকরি খুঁজতে তৎপর হয়ে উঠবেন।
ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম বোরল্যান্ড বলেন, সীমিত মানসিক চাপ আমাদের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সহায়তা করে। মানসিক চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে আপনি যতো বেশি পড়বেন, তা সামলানোর দক্ষতাও আপনার মধ্যে ততো বাড়বে।
কিন্তু মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যারও জন্ম দেয়।
যেমন-
- ১। ঘুমের ব্যাঘাত
- ২। বিরক্তি বা খিটখিটে মেজাজ
- ৩। কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া
- ৪। অ্যালকোহোল, তামাক বা মাদকাসক্তি
- ৫। খাদ্যের প্রতি অনিহা
- এছাড়াও দীর্ঘদিন মানসিক চাপ অনুভবের কারণে মানুষের অগোচরে জন্ম নিতে পারে ভয়ানক এক সমস্যা। উদ্বেগের মুহূর্তে দেহের সহানুভূতিশীল নার্ভাস সিস্টেম স্বক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দেহ উদ্বেগ দমনে নিজের অজান্তেই শারীরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
- এ পর্যায়ে মানুষ শারীরিক দিক থেকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। হয়তো আপনি কখনোই আপনার চাকরিদাতাকে শারীরিক আঘাত করতে চাইবেন না, কিন্তু মানুষ এ পরিস্থিতিতে এমনটাই করে বসে।
- এরকম পরিস্থিতিতে দেহে যেসব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়-
- ১। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
- ২। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
- ৩। মাথা ঘোরা
- ৪। মাথা ব্যথা
- ৫। বমি বমি ভাব
- ৬। পেশিতে টান অনুভব করা
এ পরিবর্তনগুলোর মূল কারণ কর্টিসোল (Cortisol)।
কর্টিসোল একপ্রকার হরমোন যা দেহের গ্লুকোজ নিঃসরণ ঘটায়। এই গ্লুকোজ পেশিতে শক্তি সরবরাহ করে এবং হুমকিকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে প্ররোচিত করে।
কর্টিসোল দেহের ইনসুলিন উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপের ক্ষেত্রে দেহ কর্টিসোল উৎপাদন অব্যাহত রাখে এবং তা বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধি, যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও দীর্ঘমেয়াদী পরিপাক সংক্রান্ত রোগের জন্ম দেয়।
মানসিক চাপ এড়ানোর উপায়
মানসিক চাপ বিষয়ক প্রবন্ধটি যদি ইতোমধ্যেই আপনার মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে জেনে নিন কীভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিকে সহজেই জীবন থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীরা নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেন-
- ১। নিয়মিত ব্যায়াম
- ২। মেডিটেশন বা ধ্যান
- ৩। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
- ৪। পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো
- ৫। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ
- ৬। খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কাজকর্ম করা
- ৭। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলাফেরা
- ৮। সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
মানসিক চাপ জীবনেরই একটি অংশ। তাই যেকোনো উদ্বেগপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকুন।